
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত করে সফল হতে পারবে না।
বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের লোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চায়, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, যারা ক্ষতি করতে চায়- আমরা তা হতে দেব না।”
স্বাধীন দেশের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই ত্যাগ ‘বৃথা যেতে পারে না’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের দোসর বা পাকিস্তানি দালাল চক্র, যারা অন্তরে অন্তরে এখনো পাকিস্তান প্রেমে ভোগে, তাদের এই চক্রান্ত কখনোই এই মাটিতে সফল হতে পারে না।”
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধিকারের চাওয়াকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালে অস্ত্রের মুখে রুদ্ধ করতে চেয়েছিল; যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল এই ভূখণ্ডের মানুষের ওপর।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার মানুষ। এরপর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী।
বাংলাদেশ যে এখন অধিকাংশ সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে, নীতি আদর্শিকভাবে, যেভাবে হোক- পাকিস্তানের উপরে আমরা থাকব। আজকে সত্যিই আমরা তা আছি। সকলের থেকে আমরা ভালো অবস্থানে আছি, এটা ধরে রাখতে হবে।
“নইলে ওই পাকি প্রেমি যারা, তারা বিদেশেই থাক আর যেখানেই থাক, তাদের চক্রান্ত কিন্তু থাকবে,” বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক জিয়ার দিকে ইংগিত করে বলেন শেখ হাসিনা।”
তিনি বলেন, “জাতির পিতার কথা স্মরণ করতে হবে যে ‘৭ কোটি বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না’। আর এখন আমরা ১৬ কোটি। কিছু মুষ্টিমেয় দালাল থাকতে পারে। কিন্তু এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, দাবায়ে রাখতে পারবে না। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।”
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ত্যাগের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “জীবনে কী পেলাম- কী পেলাম না, সেই চিন্তা না। মানুষের জন্য কী করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কতটুকু করতে পারলাম- সেই চিন্তাটাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের থাকতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থ-সম্পদ একটি নেশার মত। মানুষ অন্ধের মতো ছুটতে থাকে। কিন্তু অর্থ সম্পদ কেউ কবরে নিয়ে যেতে পারে না।
“তাদের পরিবার ধ্বংস হয়। ছেলে-মেয়েরা বিপথে যায়। মাদকাসক্ত হয় বা ভিন্নপথে চলে যায় অথবা জঙ্গিতে যায়। হুঁশ থাকে না। ছুটতেই থাকে। ”
এই ‘দুরারোগ্য ব্যাধি’ থেকে যদি কেউ মুক্ত হতে পারে, আর দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হতে পারে, তাহলে সেই দেশের উন্নতি হয় বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা নিহত হওয়ার পর নেতাকর্মীরা কোথায় ছিলেন- সেই প্রশ্ন তুলে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এত বড় একটা ঘটনা বাংলাদেশে কোনো লোক জানতে পারল না? কেউ কোনো পদক্ষেপ নিল না? ওই লাশ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরে। কেন? সেই উত্তর এখনো আমি পাইনি। এত বড় সংগঠন এতো নেতা কোথায় ছিল?”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা এ সময় ‘ঠিক ঠিক’ বলে চিৎকার করে ওঠেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাঝে মাঝে এটা আমার জানতে ইচ্ছা করে যে কেউ সাহসে ভর দিয়ে এগিয়ে আসতে পারল না? বাংলার সাধারণ মানুষ তো বঙ্গবন্ধু মুজিবের সাথে ছিল!
“হয়তো এই ব্যর্থতার খেসারতই দিতে হয়েছে জাতিকে। কারণ জাতির পিতাকে হত্যার পর বারবার ক্যু হয়েছে। ১৮/১৯টা ক্যু হয়েছে এই দেশে। অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে আমার দলের নেতাকর্মীদের ওপর। সেই সময় যদি কেউ সাহসে ভর করে দাঁড়াত, তাহলে এই অত্যাচার হত না, বারবার ক্যু হত না।”
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।