• লাইফস্টাইল
  • »
  • আজ বাংলা সাহিত্যের অমর কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর -৪৮ তম প্রয়াণ দিবস

আজ বাংলা সাহিত্যের অমর কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর -৪৮ তম প্রয়াণ দিবস

প্রকাশ : September 14, 2019, 1:14 am

 

জন্মঃ ২৪ জুলাই, ১৮৯৮ ইং
মৃত্যুঃ ১৪ সেপ্টেম্বর- ১৯৭১ ইং

বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক ছিলেন। তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পগ্রন্থ, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী এবং ২টি ভ্রমণ কাহিনী। এই বিশিষ্ট সাহিত্যিক রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।

জন্ম ও শিক্ষাঃ
২৪ জুলাই-১৮৯৮, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মায়ের নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রভাবতী দেবী। তাদের বাড়িতে নিয়মিত কালী ও তারা মায়ের পুজো হতো। তার বাবা মা দুজনেই ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও আদর্শনিষ্ঠ। তারাশঙ্করের জন্মগ্রহণ করার আগে প্রভাবতী দেবী ও হরিদাসের জ্যেষ্ঠপুত্রের মৃত্যু হয়। তাই তাদের পরিবারে তারা মায়ের পুজো শুরু হওয়ার ঠিক দশমাস পরে তারাশঙ্করের জন্ম হয়৷ তিনি মায়ের দয়ায় জাত হয়েছিলেন বলেই তার নাম রাখা হয় তারাশঙ্কর। তারাশঙ্কর ছোটবেলায় মাদুলি, তাবিচ, কবচ এবং বহু সংস্কারের গণ্ডিতে বড় হয়ে ওঠেন। আসলে সততা, ধর্মভাব, ভক্তি ও ধর্মশাস্ত্রীয় বিশ্বাস তিনি পেয়েছিলেন মায়ের কাছ থেকে। যদিও পরবর্তী জীবনে এ সব বিশ্বাস নিয়ে অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব ও জিজ্ঞাসা তার মনকে আলোড়িত করেছে। প্রগতিশীল চিন্তার শরিক হয়েছেন। তারাশঙ্করের বাল্যজীবন কাটে গ্রামের পরিবেশেই গ্রামের স্কুল থেকে।

তারাশঙ্কর লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে ১৯১৬ সালে এন্ট্রান্স (প্রবেশিকা) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে এবং পরে সাউথ সুবার্বন কলেজে (এখনকার আশুতোষ কলেজ) ভর্তি হন। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। স্বাস্থ্যভঙ্গ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের কারণে তার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি।

ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার কারণে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গ্রেপ্তার হলেও পরে মুক্তি পেয়ে যান। এরপর নিজেকে সাহিত্যে নিয়োজিত করেন। ১৯৩২ সালে তিনি প্রথমবার শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে দেখা করেন। একই বছরে তার প্রথম উপন্যাস “চৈতালী ঘূর্ণি” প্রকাশ পায়।

তারাশঙ্কর ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বাগবাজারে একটি বাড়ি ভাড়া করে নিজের পরিবারকে কলকাতায় নিয়ে আসেন ও ১৯৪১-এ তিনি বরাহনগরে চলে যান। তারাশঙ্কর ১৯৪২-এর বীরভূম জেলা সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন এবং ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংগঠনের সভাপতি হন। তিনি ১৯৭০ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

রাজনৈতিক জীবনঃ
তারাশঙ্কর কংগ্রেসের কর্মী হয়ে সমাজসেবামূলক কাজ করেন এবং এর জন্য তিনি কিছুদিন জেল খাটেন। একবার তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের সদস্য হন।

লেখার বৈশিষ্ট্যঃ
তার লেখায় বিশেষ ভাবে পাওয়া যায় বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, তারাশঙ্কর তার সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তার লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তার অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সেখানে আরও আছে গ্রাম জীবনের ভাঙনের কথা, নগর জীবনের বিকাশের কথা।

চলচ্চিত্রঃ
তারাশঙ্করের উপন্যাস, গল্প ও নাটক নিয়ে চল্লিশটিরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সত্যজিৎ রায়ও তারাশঙ্করের জলসাঘর এবং অভিযান উপন্যাসের সফল চিত্ররূপ দিয়েছেন। তার যেসব রচনা চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে সেগুলির মধ্যে আছে:
জলসাঘর, ১৯৫৮ ও অভিযান, ১৯৬২ এই ছবিগুলো সত্যজিৎ রায়-এর পরিচালিত। অগ্রদানী, পরিচালক- পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৮৩। আগুন, পরিচালক- অসিত সেন, ১৯৬২। আরোগ্য নিকেতন, পরিচালক- বিজয় বসু, ১৯৬৯।

জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্তঃ উত্তরায়ণ, পরিচালক- অগ্রদূত, ১৯৬৩। কবি, পরিচালক- দেবকী বসু, ১৯৪৯ এবং সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৭৫। কান্না, পরিচালক- অগ্রগামী, ১৯৬২, কালিন্দী, পরিচালক- নরেশ মিত্র, ১৯৫৫।গণদেবতা, পরিচালক- তরুণ মজুমদার, ১৯৭৯। চাঁপাডাঙার বউ, পরিচালক- নির্মল দে, ১৯৫৪। জয়া, পরিচালক- চিত্ত বসু, ১৯৬৫। ডাকহরকরা, পরিচালক- অগ্রগামী, ১৯৫৮।
দুই পুরুষ, পরিচালক- সুবোধ মিত্র, ১৯৪৫ এবং সুশীল মুখোপাধ্যায়, ১৯৭২। ধাত্রীদেবতা, পরিচালক- কালীপ্রসাদ ঘোষ, ১৯৪৮। না, পরিচালক- শ্রীতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৫৪। ফরিয়াদ, পরিচালক- বিজয় বসু, ১৯৭১। বিচারক, পরিচালক- প্রভাত মুখোপাধ্যায়, ১৯৫৯। বিপাশা, পরিচালক- অগ্রদূত, ১৯৬২। মঞ্জরী অপেরা, পরিচালক- অগ্রদূত, ১৯৭০। রাইকমল, পরিচালক- সুবোধ মিত্র, ১৯৫৫। শুকসারী, পরিচালক- হারানো সুর গল্প অবলম্বনে, পরিচালক- সুশীল মজুমদার, ১৯৬৯। সন্দীপন পাঠশালা, পরিচালক- অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়, ১৯৪৯। সপ্তপদী, পরিচালক- অজয় কর, ১৯৬১। হার মানা হার, পরিচালক- মহাশ্বেতা উপন্যাস অবলম্বনে,পরিচালক- সলিল সেন, ১৯৭২। হাঁসুলীবাঁকের উপকথা, পরিচালক- তপন সিংহ, ১৯৬২ এবং বেদেনি (২০১০) প্রভৃতি।

পুরস্কারঃ
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে “রবীন্দ্র পুরস্কার” লাভ করেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে “সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার” পান। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীন ভ্রমণে যান। এর পরের বছর তিনি অ্যাফ্রো-এশিয়ান লেখক সঙ্ঘের কমিটি গঠনের প্রস্ততিমূলক সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন গমণ করেন। এর পর তিনি তাসখন্দে অনুষ্ঠিত অ্যাফ্রো-এশিয়ান লেখক সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তারাশঙ্কর ভারত সরকারের পদ্মশ্রী ও ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন।
শরৎস্মৃতি পুরস্কার (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)
জগত্তারিণী স্মৃতিপদক (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)
রবীন্দ্র পুরস্কার (আরোগ্য নিকেতন)
সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার (আরোগ্য নিকেতন)
জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (গণদেবতা)
পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ উপাধি।

পরিশেষে বলতে হয়, তারাশঙ্করের রচনার আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য-তিনি পরম যত্নের সঙ্গে মানুষের মহত্ত্বকে তুলে ধরেছেন।
তাঁর লেখায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে জন্মভূমি বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের মাটি ও মানুষ, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবনচিত্র, স্বাধীনতা আন্দোলন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ব্যক্তির মহিমা ও বিদ্রোহ, সামন্ততন্ত্র-ধনতন্ত্রের দ্বন্দ্বে ধনতন্ত্রের বিজয় ইত্যাদি তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্তু। মানবচরিত্রের নানা জটিলতা ও নিগূঢ় রহস্য তাঁর উপন্যাসে জীবন্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
শরৎচন্দ্রের পরে কথাসাহিত্যে যাঁরা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তারাশঙ্কর ছিলেন তাঁদের একজন। বিশেষ করে তার রচিত ছোট গল্পগুলো একেকটি হীরকখন্ডতুল। তিনি বাংলা ছোটগল্পের অন্যতম প্রধান কারিগর ও নির্মাতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটগল্প রচনায় হাত না দিলে হয়তো তারাশঙ্করই হতেন বাংলা ছোটগল্পের জনক।
(তথ্য সংগ্রহ করা)

 



সর্বশেষ সংবাদ
বরিশাল সদর উপজেলা আনসার ভিডিপির ভাতা ভোগীদের মধ্যে প্রথম বার ঈদ সামগ্রিক বিতরণ! ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে পবি প্রবি'র ট্রেজারারের একমাত্র ছেলে খালিদ। বরিশালে জমকালো আয়োজনে পালন করা হয়েছে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। রাজাপুর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস কতৃক সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে! বরিশাল সদর উপজেলায় আনসার ভিডিপির নবাগত কর্মকর্তা রাবেয়া সুলতানা নাজমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে সম্ভাবনা দিয়েছেন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন দলনেতা দলনেত্রী ইউনিয়ন আনসার কমান্ডারগণ। রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে বিল দেয়ায় গ্রাহক ভোগান্তি চরমে! বরিশাল শেবাচিম বহিঃ বিভাগের চিকিৎসকদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সাথে আতাত % নেয়া বানিজ্য সিন্ডিকেটে ভোগান্তিতে অসহায় গরীব রোগীরা! বরিশালসহ দেশের ০৯ অঞ্চলে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আবাস! আবহাওয়া অধিদপ্তর! ৪ লক্ষ টাকায় খুন করা হয় সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ফুয়াদকে! পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক ভোগান্তি।