
৪০ হাজার রাইফেল নিয়ে সম্মূখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিল আনসার সদস্যরা
বাঙালির জাতীয় জীবনে চির-স্বরনীয় হয়ে থাকবে মহান মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর গৌরবময় ভূমিকার কথা। ২৬ মার্চেই আনসার বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর অংশগ্রহন ও ত্যাগের মহিমা বাঙালি জাতির স্বাধীনতায় অবিস্বরনীয় অবদান হিসেবে স্বীকৃত । মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের (মুজিবনগর) গন-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে স্বাকৃতি দিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করেন আনসার বাহিনীর পিসি ইয়াদ আলীর নেতৃত্বে ১২ জন বীর আনসার সদস্য।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্বরনীয় অবদানের স্বাকৃতি স্বরুপ আনসার বাহিনীর ১ জন সদস্য বীর বিক্রম এবং দুজন সদস্য বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ৬৫৮ জন বীর সদস্য শহিদ হন।
বাহিনীর বিভিন্ন সূত্র থেকে জানায়, তৎকালিন আনসারের এ্যাডজুট্যান্ট এস এম জহুরুল হক তালুকদার ২৬ মার্চ সিরাজগঞ্জ মহকুমা এসডিও এ কে সামসুদ্দিনের সাথে আলোচনা পূর্বক যুদ্ধে অংশগ্রহনের সিদ্ধআন্ত গ্রহন করে শাহজাদপুর কুঠিবাড়ীর বকুলতলায় অস্ত্র নিয়ে সমবেত হয়। সেখান থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহনের জন্য আনসার সদস্যদের মধ্য অস্ত্র ও গোলা বারুদ বন্টনের পর স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ত্যাগের শপথ নেয়। এর পরেই সারাদেশ জুড়ে আনসার সদস্যরা ৪০ হাজার রাইফেল নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহনের মাধ্যমে গৌরবময় ভূমিকা রাখেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া কালজয়ী ভাষনে মাতৃ-ভূমির টান ও দেশাত্ববোধ আনসার বাহিনী সদস্য থেকে শুরু করে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জাগ্রত করেছিল, যার ফলে ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেল সহ আনসার বাহিনী অকুতোভয় সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিজ্ঞায়। দেশকে শত্রু মুক্ত করার সংগ্রামে পাক-হানাদার বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৬৭০ জন সদস্য শহীদ হন। স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রে আনসার বাহিনী অন্যতম অংশীদার, যাদের রক্তের বিনিময় অর্জিত হয়েছে মোদের স্বাধীনতা। প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীর নেতৃত্বে ১২ জন বীর আনসার সদস্য ঐত্যিহাসিক ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী মুজিব নগর সরকার কে প্রথম গার্ড অব অনার প্রদান করে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ সম্মানের দাবীদার। তার স্বীকৃতি স্বরূপ গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে একমাত্র আনসার বাহিনীকে ১৭ এপ্রিল ঐত্যিহাসিক মুজিব নগর দিবসে গার্ড অব অনার প্রদান করার ক্ষমতা অর্পন করেছেন। যা আনসার বাহিনীর জন্য একটি বিরল সম্মান সুচক মাইল ফলক। গার্ড অব অনার প্রদানের নেতৃত্বদান কারী প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলী নামে বাহিনীর সর্ব বৃহৎ শফিপুর একাডেমীতে অবস্থিত প্যারেড গ্রাউন্ডের নাম করন করা হয়।
৭১’র পরবর্তী কালে আনসার বাহিনীর কর্মকান্ডের পরিধি সম্প্রসারণে জন-নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশ ও জাতির উন্নয়ন ভাবনায় ১৯৭৬ সালের ৫ই জানুয়ারী গ্রাম প্রতিরক্ষা দল ভিডিপি প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যার পূর্ণাঙ্গ নাম করণ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী করা হয়।